হাসাইগাড়ী বিল

 পানির ঢেউয়ের শব্দ আর সূর্যাস্তের সময় আকাশের লাল আভা পানিতে পড়তেই রক্তিম হয়ে ওঠে চারপাশ। নয়নাভিরাম এই দৃশ্যের দেখা মেলে নওগাঁর হাঁসাইগাড়ী বিলে। বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা সড়ক। নির্মল বাতাস আর লাল শাপলা দর্শনার্থীদের মন কাড়ে। 

এখানে সময় কাটাতে পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসেন দর্শনার্থীরা। নওগাঁ জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ১১ কিলোমিটার দূরে এই হাঁসাইগাড়ী বিলের অবস্থান। শহরের গোস্তহাটির মোড় থেকে যে কোনো যানবাহনে চড়ে সেখানে যাওয়া যায়।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিন শীষ বলেন, হাঁসাইগাড়ী বিলের অবারিত সৌন্দর্য খুবই আকর্ষণীয়। এখানে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে আরও কীভাবে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করা যায় সে ব্যাপারে প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করাসহ সেলফি পয়েন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বিল থেকে বছরে প্রায় ১৮ হাজার ৪১৩ টন বোরো ধান, ৭৬০ টন সরিষা ও ১৩৪ টন আলু উৎপাদন হয়। আগে শুধু ধান উৎপাদন হলেও এখন কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে বাড়তি রবিশস্য উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করাসহ কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার দুই ইউনিয়ন হাঁসাইগাড়ী ও শিকারপুর অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা। হাঁসাইগাড়ী বিলে বছরের অর্ধেকের বেশি সময় পানি থাকে। এ বিলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেকের জীবন-জীবিকা। প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। আবার শুষ্ক মৌসুমে চলে ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন রবিশস্যের আবাদ। স্থানীয়রা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে এ স্থানটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত পাবে। পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শিকারপুর ইউনিয়নের খামারবাড়ী মোড় থেকে হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাটখৈইর বাজারের দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে এখানকার মানুষের জীবন ছিল কষ্টের। ২০১০ সালে প্রায় ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দে এখানে রাস্তার কাজ শুরু হয়। রাস্তার কাজ শেষে শিকারপুর ও হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন দুটি সংযুক্ত হয়। সেই থেকে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা পরিবর্তন হতে থাকে। রাস্তাটি নির্মাণের পর থেকেই এ বিলের অবারিত সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।

Comments

Popular posts from this blog

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার

কক্সবাজার